স্মৃতির মানসপটে বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ Banskhali Degree College

স্মৃতির মানসপটে বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ Banskhali Degree College


 

স্মৃতির মানসপটে বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ

Banskhali Degree College, Chittagong

সময়টা ২০০৫ইং সাল ।সবে এসএসসি পাশ করে স্কুল জীবনের অধ্যায়ের ইতি টেনেছি মাত্র।মনটা ফুরফুরে, চঞ্চল, এককথায় উড়ুউড়ু।কলেজ জীবনের মজাটা অন্য জায়গায় । বয়ঃসন্ধিকালের মুক্তির আনন্দের উচ্ছ্বাস বা বাঁধনহারা হওয়ার, প্রথম শেকল ছেড়ার আওয়াজটা নিশ্চয় প্রাণে বা কানে মারাত্মক ভাবে ঠেকে। হঠাৎ করে কুয়োর ব্যাঙ নদীতে এলে যেমনটা হয় আরকি! কি করি আজ ভেবে না পাই অবস্থা…...!

কলেজে ভর্তি হবো, কি যে এক অজানা আনন্দ আমাকে নাড়া দিচ্ছিল, মনেহয় যেন সদ্য জন্মনেওয়া পাখির ছানাটির ডানা ঝাপটানোর মতো এক চঞ্চল অনুভূতি।একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কলেজে ভর্তি হবো সেই আশাতেই মা বলেছিল বৃহস্প্রতিবার শুভদিন আছে ঐদিন গিয়ে ভর্তি হয়ে আসিস। স্বপ্নকে সত্যি করার প্রয়াসেই মানুষ শুভ অশুভ সন্ধান করেন।

২৩ই জুন ২০০৫ইং, বৃহস্প্রতিবার, আজ আমি আমার স্বপ্নের সেই “বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ” এ ভর্তি হতে যাচ্ছি। আমার ডলি দিদির সাথে আমি গিয়েছিলাম। একাদশ শ্রেণীর ভর্তির দ্বায়িত্বে ছিলেন জনাব করিম ভাই। করিম ভাই আবার ডলি দিদির বন্ধু। সেই সুবাধে ভর্তিতে কোন সমস্যা হয়নি।

 

যেদিন ভর্তি হয়েছিলাম সেদিন তেমন কোন ছেলেমেয়ে দেখা যায়নি, নিরব ক্যাম্পাস, কয়েকজন নতুন ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী ছিল মাত্র। ২০০৫সালের ২রা জুলাই ছিল আমাদের ওরিয়েন্টেশন। মুখরিত ক্যাম্পাস,চারদিকে কোলাহল,শত শত শিক্ষার্থীর পদচারণায় কলেজ তখন প্রাণচঞ্চল। সবাই একসাথে বসেছি ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে, ওরিয়েন্টেশন মানে কি সেটাও জানতাম না তখন। কলেজে আমার প্রথম শিক্ষা শুরু হয়েছিল orientation  এর সঠিক অর্থ জানার মধ্য দিয়ে। এটি সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করে ছিলেন শ্রদ্ধেয় স্যার মানিক দে। এখনো মনে আছে, উনিই প্রথম শিখিয়েছিলেন orientation মানে পূর্বদিকে মুখ করে বসা বা পরিস্থিতি,পারিপাশ্বিক অবস্থা ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত করানো বা পরিচিত হওয়া। কলেজ মানে স্বপ্ন বুনার সিড়ি। শিক্ষার প্রথম স্তর পেরিয়ে দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ।এই সময়ে যারা নিজেদের সুশৃঙ্খল রাখতে পারবে তারাই জীবনে বহুদূরের পথ পাড়ি দিতে পারবে। এইসব কথাই আমি আমার প্রথম ওরিয়েন্টেশন থেকে শিখেছিলাম। আজও আমার ওসব স্পষ্ট মনে আছে। ঐদিন সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের সাথে পরিচিত হওয়ার এক স্মরণীয় দিন।

অনেক উৎফুল্লতার সাথে অতিবাহিত হচ্ছিল একএকটি দিন। বাংলায় শ্রদ্ধেয় জনাব মোহাম্মদ কমরুদ্দিন স্যারের কবিতা আবৃত্তি এবং কবিতার ভাবের বিশ্লেষন আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো করে রাখতো।শ্রদ্ধেয় জনাব মোহাম্মদ মাহমুদুল হক স্যারের শকুন্তলা গল্পের নায়িকা শকুন্তলা যেন আমার চিত্রপটে ভেসে উঠত। খুব মিস্ করি শ্রদ্ধেয় আব্দুল আহাদ স্যারকে, উনার শীতল মস্তিষ্ক থেকে নিঃশৃত হিসাববিজ্ঞান আজো আমার মনে আছে।উনি খুবই ভালো একজন মানুষ যিনি ছাত্রদের সহজেই আপন করে নিতে পারেন।অর্থনীতির শ্রদ্ধেয় জনাব নিশান-ই-হেলাল স্যার খুবই স্পষ্ট ভাষী একজন মানুষ।শ্রদ্ধেয় সুচিত্রা মেডাম ছিলেন খুব স্নেহময়ী একজন শিক্ষিকা।আরেকজনের কথা না বললেই নয় যিনি খুবই স্মার্ট একজন স্যার,উনি হচ্ছেন শ্রদ্ধেয় মানিক স্যার।উনি খুবই বন্ধবৎসল এবং ছাত্রদের জন্য নিবেদিত প্রাণ একজন মানুষ।আমি শিক্ষাজীবনে উনার থেকে অনেক সহায়তা পেয়েছিলাম,যার জন্য আমি আজও কৃতজ্ঞ।

 

 আমার অনিন্দ্য সুন্দর শিক্ষাজীবনে আমি স্যারদের ভালোবাসা পেয়েছি সবসময়।আবেগতাড়িত মন আরো স্মরণ করিয়ে দেয় আরো অনেক প্রিয় শিক্ষকের কথা । যাদের কথা না বললেই নয়।মনে পড়ছে শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ জনাব আবুল হোসেন স্যার, জনাব জালাল উদ্দিন স্যার, মোজাহেদুল হক স্যার, জনাব আলতাব স্যার, মোহাম্মদ শহীদ উদ্দিন স্যার, কানাইলাল স্যার, জনাব ফারুক স্যার, রাসমোহন স্যার সহ আরো অনেক প্রিয় শিক্ষক রয়েছেন আমার।ওনারা প্রত্যেকেই আমাকে ভালোবাসা ,আর্শীবাদ দিয়ে পরিপূর্ণ করেছেন আমার শিক্ষাজীবন। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি তাঁদের সম্মান আমার হৃদয়ে অটুট থাকবে চিরদিন।আপনাদের আর্শীবাদ সবসময় আমার চলার পথের পাথেয়।

হয়তো সময়ের প্রবাহমান স্রোতের অতলে তলিয়ে যাচ্ছে জীবনের অনিন্দ্য সুন্দর দিনগুলো। জীবনের বহুরৈখিক পথে শিক্ষাজীবন এক সমুজ্জল অধ্যায়।

 

বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের প্রতিটি অঙ্গন আমার পরিচিত,খুব ভালোবাসি প্রাণের ক্যাম্পাসটাকে।শিক্ষা সংস্কৃতির দিক থেকে অনন্য একটি কলেজ। ভেসে উঠে আজো স্বপ্নের কলেজ জীবনের স্বর্ণালী অধ্যায় স্মৃতির মানসপটে….

 

লেখকঃ রাজেশ দে

প্রাক্তন ছাত্র

বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ



Post a Comment

0 Comments