বাংলাদেশে শ্রম আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা যা জানা প্রয়োজন 📘

বাংলাদেশে শ্রম আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা যা জানা প্রয়োজন 📘

 



বাংলাদেশের শ্রম আইন (Bangladesh Labour Act, 2006, সংশোধিত ২০১৩ ২০১৮) শ্রমিক, কর্মচারী মালিকদের অধিকার দায়িত্ব নির্ধারণ করে। প্রতিটি ধারা জানা না থাকলেও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা প্রতিটি চাকরিজীবী উদ্যোক্তার জন্য জানা জরুরি। নিচে সহজ ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো তুলে ধরা হলো


⚖️ . কর্মঘণ্টা বিশ্রাম (ধারা 100 – 105)

  • ধারা 100: প্রতিদিন সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা হবে ঘণ্টা।
  • ধারা 102: সপ্তাহে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা হবে ৪৮ ঘণ্টা।
  • ধারা 102(2): ওভারটাইমসহ সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৬০ ঘণ্টা (তবে গড়ে ৫৬ ঘণ্টার বেশি নয়)
  • ধারা 103: টানা ঘণ্টা কাজের পর অন্তত ঘণ্টা বিরতি দিতে হবে।
  • ধারা 105: সপ্তাহে অন্তত দিন সাপ্তাহিক ছুটি দিতে হবে।

⚖️ . মজুরি ওভারটাইম (ধারা 108, 121 – 124)

  • ধারা 108: বেতন প্রদানের সময়
    👉 মাস শেষে কার্যদিবসের মধ্যে শ্রমিককে বেতন দিতে হবে।
  • ধারা 121: ওভারটাইম ভাতা
    👉 অতিরিক্ত কাজের জন্য শ্রমিককে প্রতি ঘণ্টায় স্বাভাবিক মজুরির দ্বিগুণ দিতে হবে।
  • ধারা 122: ন্যূনতম মজুরি
    👉 সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
  • ধারা 123–124: বেতন কর্তন
    👉 নির্দিষ্ট কিছু কারণে (যেমন: অনুপস্থিতি, অগ্রিম টাকা ইত্যাদি) আইনসম্মতভাবে বেতন কর্তন করা যাবে। তবে ইচ্ছেমতো কর্তন করা যাবে না।

📌 উদাহরণ:
যদি কোনো শ্রমিকের দৈনিক মজুরি হয় ৫০০ টাকা

  • প্রতি ঘণ্টার মজুরি = ৫০০ ÷ = ৬২.৫০ টাকা
  • ওভারটাইম হার = ৬২.৫০ × = ১২৫ টাকা প্রতি ঘণ্টা
  • অতএব, ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করলে তিনি পাবেন ১২৫ × = ২৫০ টাকা

⚖️ . ছুটি সরকারি ছুটি (ধারা 115 – 118)

  • ধারা 115: এক বছরের চাকরির পর প্রতি ১৮ দিন কাজের বিপরীতে দিন বাৎসরিক ছুটি।
  • ধারা 116: বছরে ১৪ দিনের অসুস্থতার ছুটি (প্রমাণসহ)
  • ধারা 117: বছরে ১১ দিনের সরকারি ছুটি বেতনসহ।
  • ধারা 118: মাতৃত্বকালীন ছুটি ১৬ সপ্তাহ ( সপ্তাহ পূর্বে + সপ্তাহ পরে)

⚖️ . চাকরি থেকে অব্যাহতি ছাঁটাই (ধারা 26, 27, 31, 32)

  • ধারা 26: শ্রমিক চাকরি ছাড়তে চাইলে ৩০ দিনের নোটিশ (স্থায়ী হলে), ১৪ দিনের নোটিশ (অস্থায়ী হলে)
  • ধারা 27: মালিক শ্রমিককে ছাঁটাই করলে যুক্তিসঙ্গত কারণ লিখিত নোটিশ দিতে হবে।
  • ধারা 31: চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
  • ধারা 32: নির্দিষ্ট সময় চাকরি করলে শ্রমিক অবসরকালীন সুবিধা (গ্র্যাচুইটি/প্রভিডেন্ট ফান্ড) পাবেন।

⚖️ . মাতৃত্বকালীন সুবিধা (ধারা 45 – 50)

  • ধারা 45: নারী শ্রমিকরা সর্বোচ্চ ১৬ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন।
  • ধারা 46: শর্ত হলো, একই প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে মাস চাকরি করার পর এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
  • ধারা 47–50: মাতৃত্বকালীন সময়ে পূর্ণ বেতন প্রদান বাধ্যতামূলক।

⚖️ . স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা কল্যাণ (ধারা 51 – 60, 80 – 89)

  • ধারা 51: পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
  • ধারা 52: নিরাপদ পানীয় জল শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • ধারা 55: প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক।
  • ধারা 78–79: ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শ্রমিকদের জন্য হেলমেট, গ্লাভসসহ সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • ধারা 89: ৫০০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে ক্যান্টিন রাখা বাধ্যতামূলক।

⚖️ . শ্রম আদালত বিরোধ নিষ্পত্তি (ধারা 213 – 218)

  • ধারা 213: শ্রমিক-মালিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শ্রম আদালত রয়েছে।
  • ধারা 214: আদালত বকেয়া মজুরি, চাকরি ফেরত, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি নির্ধারণ করতে পারে।
  • ধারা 218: শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।

⚖️ . ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার (ধারা 176 – 190)

  • ধারা 176: শ্রমিকরা সংগঠন (Trade Union) করার অধিকার রাখে।
  • ধারা 179: ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য অন্তত ২০% শ্রমিকের সমর্থন থাকতে হবে।
  • ধারা 190: ইউনিয়ন শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় আলোচনা পদক্ষেপ নিতে পারে।

📝 উপসংহার

বাংলাদেশের শ্রম আইন শ্রমিকদের অধিকার মালিকদের দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেছে। প্রতিটি শ্রমিক, চাকরিজীবী বা উদ্যোক্তার জন্য এসব ধারা জানা অত্যন্ত জরুরি। এতে একদিকে শ্রমিক তার ন্যায্য অধিকার পাবে, অন্যদিকে মালিকও আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।

Also Read....



Post a Comment

0 Comments