ভালোবাসার উত্তরাধিকার

ভালোবাসার উত্তরাধিকার

 


যখন আমি এই পৃথিবী ছাড়ব, তখন হ্রদের পাড়ের ছোট্ট কেবিনটা আমার আত্মীয়দের কাছে যাবে না।
এটি যাবে একমাত্র সেই প্রাণটির কাছে, যে কখনো আমার পাশ ছেড়ে যায়নি—আমার ল্যাব্রাডর, স্কাউট

আমি জানি, মানুষ কথা বলবে।

এখন আমি পিছনের বারান্দায় বসে আছি, সামনে শান্ত জলের দিকে তাকিয়ে। আমার হাঁটুর ওপর স্কাউটের ভারী মাথা রাখা। বয়সের সঙ্গে তার লোম ফিকে হয়ে গেছে, শ্বাস ধীর হয়েছে, কিন্তু তার বিশ্বস্ততা একটুও কমেনি।

প্রায়ই শুনি—
“এত দূরে একা থাকলে নিশ্চয়ই ভীষণ একাকী লাগে?”

কিন্তু তারা বোঝে না।
একাকীত্ব মানে হলো খালি ঘর, উত্তর না মেলা ফোনকল। একাকীত্ব মানে হলো কেউ এসে না-উঠা।

আমি একা নই।
কারণ প্রতিটি সকালেই স্কাউট আমার সঙ্গে থাকে।
আমার পেছনে পেছনে মেঝের ওপর হেঁটে বেড়ায়।
আমি বুট জুতা না পরা পর্যন্ত দরজার কাছে অপেক্ষা করে।
ডকের দিকে নামলে আমার সঙ্গে হাঁটে, আমি কফি খাওয়ার সময় পাশে বসে থাকে।
রাতের আগুনের শেষ অঙ্গার নিভে যাওয়া পর্যন্ত পাশে থাকে।

আমার সন্তানরা বহু বছর আগে আসা বন্ধ করে দিয়েছে—ব্যস্ত জীবন, ঠাসা ক্যালেন্ডার।
নাতি-নাতনিরা মাঝেমধ্যে টেক্সট পাঠায়, কিন্তু তাদের ভাষা আমি আর বুঝতে পারি না।
পড়শিরা সৌজন্য দেখায়, কিন্তু দূরেই থাকে।

কিন্তু স্কাউট?
সে-ই থেকেছে আমার প্রতিটি বজ্রঝড়ে, প্রতিটি ব্যথায়, প্রতিটি হাহাকারে ভরা শীতে।

গত শরতে আমি এক আইনজীবীর অফিসে বসে সব লিখে দিলাম।
কেবিন, জমি, আমার সব সম্পত্তি যাবে একটি পশু আশ্রয়কেন্দ্রে—একটি শর্তে:
স্কাউট এখানে থেকে যতদিন বাঁচবে, তার যত্ন নেওয়া হবে।

আইনজীবী ভুরু কুঁচকালেন—
“আপনার পরিবার আপত্তি করতে পারে।”

আমি বললাম,
“তারা চাইলে করুক। কিন্তু এই এক প্রাণীই আমার পাশ থেকে সরে যায়নি। এই সম্মান তার প্রাপ্য।”

মানুষ যে বিষয়টা বোঝে না—উত্তরাধিকার মানে শুধু অর্থ নয়।
এটা কৃতজ্ঞতার প্রতীক।

যেদিন আমি জানতে পারলাম যে আমি আর ব্যথা ছাড়া হাঁটতে পারব না—আমার পরিবার ছিল না।
কিন্তু স্কাউট ছিল।

যেদিন আমার স্বামীর মৃত্যুবার্ষিকীতে রাতভর বারান্দায় বসে কেঁদেছিলাম—পরিবার ছিল না।
কিন্তু স্কাউট পায়ের কাছে শুয়ে ছিল, যতক্ষণ না আমি আবার শ্বাস নিতে পারলাম।

যেদিন জন্মদিনগুলো নিঃসঙ্গতায় কেটেছে—পরিবার ছিল না।
কিন্তু আমি যখন মোমবাতি নিভিয়েছি, স্কাউট দৌড়ে এসেছে।

তাহলে হ্যাঁ, আমি মারা গেলে হয়তো অনেকে বলবে—
“সে পাগল হয়ে গিয়েছিল।”
“সে নিজের রক্তের চেয়ে কুকুরকে বেশি মূল্য দিয়েছে।”

কিন্তু আমি এসব কথাকে ভয় পাই না।
কারণ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষ সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করে না—
বরং তাদের সম্মান জানায়, যারা তাকে টিকিয়ে রেখেছিল।

এই কুকুরটাই আমাকে টিকিয়ে রেখেছে।
এই ঘরের প্রতিটি কাঠের টুকরো, প্রতিটি ইঞ্চি জমি, প্রতিটি ভক্তি সে অর্জন করেছে।

আপনি চাইলে একে উন্মাদনা বলুন।
আমার কাছে এটা ন্যায্য।

কারণ ভালোবাসার প্রমাণ হয় না কে উইল পড়ার সময় পাশে ছিল দেখে।


ভালোবাসার প্রমাণ হয়, কে প্রতিদিন, প্রতিটি ঋতুতে, অবিচলভাবে পাশে থেকেছে। ❤️🐾

Also Read...

শিক্ষার্থীদের জন্য সেরা এআই টুলস: পড়াশোনাকে দ্রুত, সহজ ও কার্যকর করার পূর্ণাঙ্গ গাইড

আয় বাড়লেও কেন সঞ্চয় হয় না এবং সমাধান জেনে নিন

Post a Comment

0 Comments